নারী যখন নিজেই নিজের শত্রু

আমি যদি আমার শত্রু হই, তাবৎ জগৎ আমার বন্ধু হয়ে লাভ নেই। যদি ভালো না বাসি নিজেকে, সম্মান না করি, শ্রদ্ধাবোধ যদি না থাকে নিজের প্রতি কেউ করবে না আমাকে। নিজেকেই যদি বিশ্বাস না করি, আত্মবিশ্বাস আসবে কোথা থেকে? নিজের যুক্তির কাছে যদি হেরে যাই নিজেই তবে তো আমি বিশ্বাস করি না নিজেকেই। নিজের অস্তিত্ব বলতে, নিজস্ব বলতে, নিজের বলতে তখন আর কিছু নেই আমার।

নারী যখন নিজেই নিজের শত্রু
নারী যখন নিজেই নিজের শত্রু

নিজে যে নিজের নয়, জগৎ তার হয়েও লাভ কী? কেননা, নিজেকেই সে জয় করতে পারে না। আর যে মানুষ নিজের হতে পারে না, অন্য কেউও তার নয়। সে কেবলই অন্যের। অন্যের ইচ্ছেয় তার জীবন, যাপন, সুখ, শখ, আনন্দ, দুঃখ, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি সব। এ কারণেই নারীদের নিজের বলে কিছু নেই, নেই নিজস্ব বলে কিছু, তারা নিজেও নিজের নয় নেহাত অন্যের।

দুনিয়াজুড়ে নারী দিবস পালিত হলো, বাংলাদেশেও। দিবসটি আর সব দিবসের মতোই যায় আসে। নারীদের কোনো আসে যায় না। দিবসটির যে রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে, বেশিরভাগ নারী তা জানেও না। জানবার আগ্রহটিও মনে হয় না, আছে তাদের। দিবসটি তার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, আদর্শ হারাতে হারাতে নেহাত একটি বাণিজ্যিক দিবসে এসে দাঁড়িয়েছে। বরাবরের মতো এবারও তাই ঘটেছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোরও বেশ সুবিধে হয়, এমন সব দিবসকে কেন্দ্র করে পণ্য বিকোতে।

পণ্য হিসেবে নারীর দুনিয়াজোড়া বাজার। বাজারের পণ্য হতে নারীর নিজেরও আগ্রহের কমতি নেই, যৌন-অযৌন দু’ধরনের পণ্য হতেই তার যারপরনাই আগ্রহ। অযৌন পণ্যের চেয়ে যৌন পণ্যের বাজার ও চাহিদা বেশি। ফলে নারীও সেদিকে আগ্রহী। নিজেদের যৌনসামগ্রী বানাতে জগতে দ্বিতীয় আর কেউ হয়ত এতো সহজে সায় দেয় না, আগ্রহ বোধ করে না। সব সময় যে পুরুষেরা নারীদের যৌনবস্তু বানাতে, যৌন বাণিজ্যের উপাচার হতে বাধ্য করে তা কিন্তু নয়। গবেষণার কাজে দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক মেয়েদের ইন্টারভিউ করেছি দেখেছি অনেকেই স্বেচ্ছায়, স্বপ্রণোদিতভাবে পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এমন নয়, কেউ তাদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়েছে, প্রেমিক সেজে বিক্রি করেছে, যৌনবাণিজ্যে বাধ্য করেছে কেউ এমন একটি গল্পও কারও এই বৃত্তি বেছে নেওয়ার নেপথ্যে নেই। যা আছে তা নিজের আগ্রহ।

আমাদের দেশের প্রচুর মেয়ে ব্যাংকক-সিঙ্গাপুর ছুটছে, ছ মাসে, ন মাসে। কেউ যাচ্ছে ঝুলে যাওয়া স্তন টানটান করতে, কেউবা স্তনের আকার ছোট-বড় নানা আকৃতিতে আনতে। ফেসবুকে ‘ক্রেজি ফর সানি’ এমন ক্যাম্পেইন করছে বাংলাদেশের এক তরুণী। নিজেকে পর্ণোতারকা সানি লিওনের মতো ভাবতে, ভাবাতে তার আগ্রহের কমতি নেই। প্রায় প্রতিদিনই অর্ধনগ্ন ছবি দিচ্ছেন ফেসবুকে। খোঁজ নিয়ে যতদূর জেনেছি, সানি লিওনের মতো অনেক বেশি উপার্জন করতে চায় সে মেধা নয়, শরীর দিয়ে।

আরেকজন তরুণীকে অনেকেই চেনেন। একটি বেসরকারি মেডিকেল থেকে ডেন্টাল পাস করেছেন, সমসাময়িকদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি স্বল্পবসনা, কখনও কখনও প্রায় পোশাক খুলেই পোজ দিতে পারেন এটিই তার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। ‘সিলিকন ইমপ্লেন্ট’ও করেছেন তিনি, যা পণ্যের বিপণনে তাকে সহায়তা করে। নিজেকে ‘আমি সাহসী মডেল’ আখ্যাও দিয়েছেন।

মুখে চুনকাম, প্লাস্টার করা ছাড়া কোনো মেয়ে আমার চোখে পড়েনি কোথাও শহরে, গ্রামে। চুনকাম লাগবেই। শত শিক্ষিত হোক, অশিক্ষিত। ‘মেকআপ’ শব্দের অর্থই তো ‘মেক সামথিং আপ’। নিজেকে সে একটি বারের জন্যও নিখুঁত মনে করতে পারে না। ভাবে খুঁত না ঢাকলে, মেকআপ না করলে, সে মুখ দেখাতে পারবে না কী ভয়াবহ হীনমন্যতা।
আইশ্যাডো… মাশকারা… ফাউন্ডেশন… কনসুলার… লিপস্টিক… লিপগ্লস… কত কী! পার্লারে গিয়ে ম্যানুফ্যাকচারিং প্রোডাক্টের মতো একই চেহারার হয়ে সব মেয়ে বেরিয়ে আসছে। তাতেই আনন্দ তাদের। হয়ত কোনো নায়িকার মতো, মডেলের মতো একই রকম তাকে দেখতে লাগছে, তাতেই মেয়েটি পুলকবোধ করে। নায়িকা কিংবা মডেলটির মতো সে কেন হতে চায়? সে তো নায়িকা নয়, মডেল নয়। মডেল কিংবা নায়িকা প্রচুর লোকের দৃষ্টি কাড়ে, পুরুষ দৃষ্টি। পুরুষরা তার প্রতিও আগ্রহবোধ করবে, বোধ করবে আকর্ষণ এই ভয়াবহ সস্তা, নিম্ন রুচির মনস্তত্ত্বও কাজ করে বেশির ভাগ মেয়ের মধ্যে।

পুরুষকে আকর্ষণ করতে পারাকেই নারীরা নিজেদের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা বলে মনে করে। জীবনের আরাধ্য ভাবে। পুরুষ ছাড়া সে ভাবতেই পারে না। ভাবে তার জীবন অসার, অসম্পূর্ণ, অসমাপ্ত থেকে যাবে। নিজের জীবন যার নিজের কাছে অবলম্বন হয়ে উঠে না, অন্যকে যে অবলম্বন ভাবে, সে মানুষ কী করে দাঁড়াবে জীবনে? বেশ কবার প্রেমে পড়ে প্রতিবারই একই অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। প্রায় প্রতিটি নারীই দেখেছি, বন্ধুত্বের চেয়ে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় আগে। ভাবে প্রেমের চেয়ে কাম বিতরণে পুরুষকে ধরে রাখা যাবে। অনেক মেয়েই এ কারণে সম্পর্কের শুরুতেই নিজের বিপদ ডেকে আনে নিজেই।

খুব ভুল ধারণা নিয়ে আমরা বসবাস করি। জীবনযাপন করি। নারীরা পুরুষতান্ত্রিক নয়, এমনটা ভাবি। ভাবনাটি নেহায়েত ভুল। পুরুষদের চেয়ে কখনও কখনও নারীরা অধিক মাত্রায় পুরুষতান্ত্রিক। তারা পুরুষতন্ত্রকে সমর্থনও করে। পুরুষতন্ত্র টিকে আছে পুরুষের কারণে নয়, নারীদের কারণেই। যারা ভাবে চারপাশের পরিবেশ প্রতিবেশ বদলাবে, খুব ভুল ভাবে তারা। চারপাশ বদলায় না, বদলাতে হয় নিজেকেই। নিজেকেই পরিবেশ তৈরি করতে হয়। উদাহরণ হতে হয়, পরিবর্তনের। সহযোগিতা করতে হয়, ভালোবাসতে হয়, সম্মান করতে হয় নিজেকেই নিজে আগে। বুঝতে হয় আমি ছাড়া আমাকে এ জগতে কে বাঁচাবে?

Related posts

Leave a Comment